প্রধান প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জ শহরে পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় সাংবাদিক, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও শিশুসহ এ-পর্যন্ত ২৪ জন মারা গেছেন।
গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে আজ রোববার (৬ সেপ্টেম্বর ২০২০) দুপুর পর্যন্ত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন পার্থ সংকর পাল এ-তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পার্থ সংকর পাল আরো জানান, এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, হাসপাতালে আসা অধিকাংশের শরীরের ৯০ থেকে শতভাগ পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে। হাসপাতালে এখনো ১৩ জন ভর্তি আছেন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতরা হলেন—সাংবাদিক নাদিম (৪৫), মসজিদের ইমাম আব্দুল মালেক (৬০), ইব্রাহিম (৪২), দেলোয়ার হোসেন (৪২), মোস্তফা কামাল (৩৫), সাব্বির (২১), জুয়েল (৭), জুবায়ের (১৮), হুমায়ূন কবির (৭০), জুনায়েদ (১৭), রিফাত (১৮) কুদ্দুস ব্যাপারী (৭০), জামাল (৪০), রাশেদ(৩০), মাইনুদ্দিন(১২), জয়নাল (৪০), নয়ন (২৭), কাঞ্চন (৫০), রাসেল (৩৪), বাহাউদ্দিন (৫৫), মিজান (৩৪), শামীম হাসান (৪৫), জুলহাস(৩৫) ও মোহাম্মদ আলী(৫৫)।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর ২০২০) রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লায় জেমস ক্লাব এলাকার বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় আগুন লেগে অর্ধশতাধিক মুসল্লি দগ্ধ হন।
এদের মধ্যে ৪০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল এবং ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া এ-ঘটনায় বাকিদের নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ভর্তি করা হয়।
২. (প্রথম তৈরি করা খবরের বাকি অংশ)
নিহতের মধ্যে জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১) দুই ভাই। তাদের বাসা নারায়ণগঞ্জের তল্লায়। সাব্বির বিএ পাস করেছেন। জোবায়ের তোলারাম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
তা ছাড়া বাবা মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মারা যান ছেলে জুনায়েদ (১৬)। দুদিন আগে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থেকে বাবার কাছে এসেছিলেন জুনায়েদ।
নিহত অন্যদের পরিচয়—মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার হাটবুকদিয়া গ্রামের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুর সদর উপজেলার করিম মিজির ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৪), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জুলহাস ফরাজির ছেলে জুয়েল (৭), পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আব্দুল খালেক হাওলাদারের ছেলে গার্মেন্টস কর্মী মো. রাশেদ (৩০), নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকার হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালি গ্রামের মো. বেলায়েতের ছেলে জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টস কর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জ নিউখানপুর ব্যাংক কলোরি কলেজ শিক্ষার্থী মো. রিফাত (১৮), চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শেখদী গ্রামের মৃত মহসিনের ছেলে মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার আনোয়ার হোসেনের ছেলে জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুক পলাশী গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী নয়ন (২৭), মো. রাসেল (৩৪) এবং ফতুল্লার তল্লার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০)।
আহতদের বিষয়ে গত শনিবার বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক ডা. হুসেইন ইমাম বলেন, দগ্ধদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। রোগীদের সবারই শরীরের কমপক্ষে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, যারা ভর্তি আছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলা যায়। এদিকে, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বার্ন ইউনিটে যান নারায়ণগঞ্জের ডিসি জসিম উদ্দিন। তিনি মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার আর আহতদের ১০ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
সকালে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণে মসজিদের ৬টি এসি পুড়ে গেছে এবং জানালার কাচও উড়ে গেছে।
গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
এই ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফায়ার ব্রিগেডের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্থিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছি। এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর ২০২০) নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিমতল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
করোনায় আরো ১৭৮ জনের মৃত্যু
টানা ২০ দিন পর দৈনিক মৃত্যু দুইশ’র নিচে ১৯৭ জন
করোনায় আরো ২১৫ জনের মৃত্যু