হাওয়ার ঢেউ
প্রদীপ মিত্র
প্রদীপ মিত্রের হাওয়ার ঢেউ
ক
বিবেকের ভেতর কখন কে যে কীভাবে হঠাৎ গাঁথে হাওয়ার ঢেউ
নীলময়ূরীর ডানার নাচের ঝাঁট; ফাৎ ফাৎ ওড়ে বকের আকাশ।
ও নাম জানি না; সে ধাম চিনি না; শুধু বুকের ভেতর এক বিশ্বাস
না-বলে যে কেউ আসতেই পারে; না-বলে যেতেও পারে কেউ…
.
খ
হারাইনি কিছু; কিছুই হারাই নাই;
দিলের ভেতর গুঁজে রেখেছি একটি পাই…
.
গ
নেচে নেচে যাই
কোনো কথা নাই, নাই কোনো হৃদয়ের ব্যথা
.
হৃদয়ে হৃদয় মেলায় আমার ভাই;
চেতনার আঙিনায় আমরা দু’ভাই
দুই হাত ঊর্ধ্বে তুলে আকাশ-রাঙানো সুরে আর স্বরে
গান গেয়ে গেয়ে ধেই ধেই করে নেচে নেচে যাই…
.
ঘ
সংকোচনে সূর্য, রুদ্রচূর্ণ কেশবের কেশ। সাগর-বায়ুর
নাভীশ্বাসে বৃক্ষতরু, তৃণ-শস্যমূল, নদীস্রোত নিমজ্জিত;
মাটির সহস্র অনুতাপ। মানুষ আমূলে এঁটেছে স্নায়ুর
তুমুল লাভের প্রতিষ্ঠায় বিপুল লালসা; সত্য বিবর্জিত।
.
হাতের আড়ালে খুনো ঘাতকের হাত রূঢ়; সমাজ-সভ্যতা
বৈষম্যের খাড়ায় ক্ষতাক্ত। ভয়াবহ কুৎসিতের দাবানল
দাউদাউ জ্বলে : জীব না জগৎ। মানুষ না পাবে ত্রাতা।
বিধাতার পাখি, বিধাতার আঁখি : সত্য ও সুন্দরে সমুজ্জ্বল।
.
আকাশ-নক্ষত্র, মেঘ-তারা : হু হু কেঁদে গেছে পাহাড়ের চূড়া;
বনবিথীর করুণ ও নয়ন; নদীগর্ভে আবর্জনা। বিদ্যা
পীঠস্থানও অক্ষম ক্ষমতার কটূ-হুঙ্কারে হুঙ্কারে দিশাহারা।
যেন জননীর ঘোরক্রোড়ে অঘোরে ঘুমায় : সর্বংসহা আদ্যা!
.
ঙ
বিশুদ্ধ অন্তরে আঁকি শুদ্ধতম একরেখা। সখা;
সর্বজনপ্রিয় সাগর-তীরের পাড়ে এসে আপনার হাতে এঁকো
তোমার বাৎসল্যকথা। দিন শেষে নির্মীলিত চোখজোড়া খুলে
পড়ে নেবো তোমার মাধুর্যকথা। জানি, আমার অক্ষরজ্ঞান
একেবারে অপ্রতুল। ভাষার রহস্যভেদে অত্যন্ত দুর্বল
আমার মনন। কী আর বলবো কপালে জোটেনি
সদগুরু। মজেছি অসৎসঙ্গে বহু…। আমার কী হবে…!
.
চ
ঐ না গায়ে যায় গো হেঁটে, আমার গাঁয়ের ছেলে
হেলেদুলে চলছে গো; চলছে গো
মেঘবায়ের গামছা মাথায় বেঁধে
সে যে আমার গাঁয়ের ছোট্ট একটা ছেলে…
.
কোমর বাঁকা ধানের মাচা
সজনে গাছে ছাগল বাঁধা
তারপাশে অশোকচূড়া
ঐখানেতে আমার মরা; আমার বাঁচা…
.
ছ
নিষ্পেষিত আত্মার আহ্বানে জেগে ওঠো
হে আমার ব্রহ্মাণ্ডের নান্দনিক সৌন্দর্যের শক্তি
বোধের অধিক অক্ষয় বোধের প্রজ্জ্বলিত দীপ্তি
জেগে ওঠো হে আমার প্রাণের কাব্যের অনুভূতি
চেতনার সুমহান স্তরে স্তরে সুবিস্তৃত করো
চেতনার অনন্ত তরঙ্গ…
.
জেগে ওঠো হে আমার নিষ্পেষিত আত্মার অমলজ্যোতি
দান্তের প্রদীপ্তদ্যুতি, হোমারের প্রাঞ্জলপ্রতীতি
সক্রেটিসের বাক্সময়গাথা, রবীন্দ্রনাথের হৃদয়হরণ অনুরণন
মহাকালজয়ী ব্যাস-বাল্মীকি কোকিলোকণ্ঠ অলঙ্কার যথা…
.
আমার বিপুলা দৃষ্টির তরঙ্গে নির্ভয়-নির্ভঙ্গ আলোড়ন তোলো
হে আমার নিষ্পষিত আত্মার ভেতর ডুকরে ডুকরে ওঠা
আকাশ-বায়ুর নদী-পাখিদের হৃদয়-ক্ষরণ বেদনার ভয়ঙ্কর বার্তা
মেঘ-ময়ূরের চোখ থেকে ঝরা টপ টপ টপ ফোঁটা
মাটির অন্তরকাঁপা রৌদ্রব্যথা
আমাকে কাঁদায়; আমাকে কাঁদায়
হে আমার ব্রহ্মাণ্ডের অনন্ত আকাশ
এই পাখিপল্লবের পাহাড়চূড়ার বুকঠাসা আর্তনাদে জাগো জাগো
জাগো হে আমার অক্ষয়আত্মার অসীমবিকাশ;
অক্ষয়আত্মার অসীমবিকাশ জেগে ওঠো;
জেগে ওঠো সাম্য আর সৌন্দর্যের অনলপ্রবাহ
প্রীতির চত্বরে জেগে ওঠে রাখো দিগন্তবিস্তৃত একটি স্বাক্ষর
বিশ্ববিবেক জাগানো অমৃতসনদ; অনন্তঅমৃত উত্থানের প্রবলঅক্ষর…
…………………
পড়ুন
কবিতা
4 thoughts on “প্রদীপ মিত্রের হাওয়ার ঢেউ”