পাঁচটি কবিতা
নাসিমা খাতুন
নাসিমা খাতুনের পাঁচটি কবিতা
ভাঙা অকূল
ঘরের দুয়ারে পায়চারি করে
তোমার অনাগত পায়ের প্রতিধ্বনি,
ছোট্ট এ জীবনে জলের সূত্রে ভেসে যায় দিন,
দ্রাঘিমার ধকলে জীবনের চক্ররেখা—
হৃদয়ের সংকটে ঝুলে থাকে চেতনার সম্পাদ্য।
.
আমি কি ভুল করে ভেবেছিলাম তোমার নাম?
ভুলের বেসাতিতে তুমিও কম নও—
যার নামে বোননি হৃদয়ের বীজ
তাকেই শুনিয়েছিলে হৃদ কম্পনের গান!
খেসারতের প্লাবন আজ কূল ভাঙা দুকূলে—
পাড় ভাঙা ঢেউ নিয়ে ভেসে যায় নদীর হতাশা।
.
দূর থেকে দেখি সবুজ ঘন বন
আসলে সে তো সংকটে পুড়ে যাওয়া আঁধার ঘেরা মন।
.
চাঁদকে ছুঁতে পারি না,
জোৎস্না ছূঁয়েই ছুঁয়ে দেই চাঁদের অভিলাষ,
দুঃখ ছুঁয়েই ছূঁয়ে থাকি তোমার দেহ-মন।
.
অনুচ্ছেদে ব্যবচ্ছেদ
কুসুমের সৌরভ হাতে নিয়ে ছুটে যায় যে মেঘ
রাতের নির্জনে শাসায় সে সূর্যের দেহকে।
খোকনের দুধ মাখা ভাত খেয়ে যায় অসাধু কাক,
মায়ের চোখে হাঁটে তাই কালান্তরের নির্ঘুম।
.
বকুল মালার শপথ কোঁচায় নিয়ে
নিভে গিয়েছিল যে যুবকের যৌবন
আলখেল্লায় ঝুলেছিল বহুদিনের
প্রতীক্ষিত প্রাচীনপন্থী সাম্যবাদী বিরহ।
.
পুঁজিবাদী সূত্র খোঁপায় গুঁজে বেড়ে উঠে
চিরচেনা বিশ্বাসের যে অর্ধনমিত চোখ—
দিনশেষে মৌতাত ভাঙে অশুভ আলিঙ্গনের ব্রতে,
ভোগবাদী বিরহ পাটিসাপটায় জড়ায়
চুনোপুটি দাড়কিনির ঘর ভাঙা সাঁতারের জলে।
.
প্রতিদ্বন্দ্বি স্বপ্ন
ভুল করে শৈশবের বিছানায় ফেলে এসেছিলাম
বিশুদ্ধ রঙ পেন্সিলে আঁকা এক খণ্ড স্বপ্নের ভেজা দেয়াল,
এখনো এই অবেলায় সেই রঙচিত্রের ফরমূলা খুঁজে খূঁজে
কাঁদামাটির বাসনে হয়ে যাই দূর্বাঘাসের শ্যাওলা।
ক্লান্ত চোখে পথের বিনুনিতে এখনো শৈশবের ঘুড়ি উড়ে,
অথচ প্রতিটা উড়াল ঘুড়ি আত্মহত্যার
হুমকি দিয়ে ফিরে যায় না-ফেরার প্রতীজ্ঞায়।
.
আজ মুছে যাওয়া তৈলচিত্রে বিদায়ের প্রজাপতি উড়ে,
শব্দ সাজে ফেরারী পাখির সন্ধ্যে হারানোর গল্পে,
কত গান বেঘোরে প্রাণ দিল সারেগানার অভাবে,
কত বাঁশির বুক থেকে হারিয়ে গেল যুবকের রুমাল
সুগন্ধি চালের আলপথ ধরে ফিকে হয়ে আসে
ডুবে যাওয়া সূর্যের কপালের সিঁদুর।
.
রাতের আঁধারে শরীরে শরীর ঘেঁষে
কচ্ছপ পায়ে এগিয়ে আসে
ঘুমপাড়ানী মাসিপিসির প্রতিদ্বন্দ্বি দল।
.
শব্দার্থে অন্যার্থ
আয়নাই চেনে মুখের দুরাবস্থা,
সূর্যামূখী প্রবন্ধে আঁকা জীবন—
রোজ রাঙায় দেবতায় মুখ।
.
জন্মগত চাষা তুমি,
স্বার্থের আবাদে দক্ষ কৃষক
তোমার কাছে ভালোবাসা মানে—
চুলায় ভাতের হাড়ি
আর বিছানায় শরীরের চাষাবাদ।
.
অকালে হেঁটেছিল কালের পথ কপালের করিডোরে
তুমি সুদ-কষা অঙ্কে ভালোবাসার চিহ্ন এঁকেছিলে
জরায়ুর মোহনায়।
.
উল্লাসে দুঃখকোষ
একেকটি ভোর হাজির হয়
মধ্যরাতের একেকটি কালো রঙের গল্প নিয়ে,
আজকের সকালটি এসেছে বিগতকালের
বীভৎতার উদাহরণ হয়ে।
.
মেঘের পাহাড়ে আঁচল উড়িয়ে
লজ্জায় ঢাকে পৃথিবীর মুখ,
অজানা গন্তব্য নির্মাণে পরিপক্ক
মৃত্যু পথযাত্রী মেঘের ফেনা।
বেদনার বলিরেখা পরাজয়ের নৈবেদ্যে
আত্ম-ভ্রমণে উচ্ছসিত মিথ্যে মোড়কের আহ্লাদে,
দুঃখের ক্লোন কাঁধে নিয়ে নিরন্তর হেঁটে যায় স্বদেশি জমজ কোষ।
…………………
পড়ুন
কবিতা
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা