বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ বুধবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২০) এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। প্রণব মুখার্জি একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে নানা ক্ষেত্রে বন্ধু হয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিলেন।
রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর ২০২০) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। অন্যদিকে, তাঁর মৃত্যুতে সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিকে, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নয়াদিল্লিতে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। দিল্লির লোদি রোডের শ্মশানে গান স্যালুটের মাধ্যমে শেষ বিদায় জানানো হয় সে দেশের ১৩তম রাষ্ট্রপতিকে।
এর সঙ্গে অবসান হলো পাঁচ দশক দিল্লিতে দাপিয়ে বেড়ানো এক বর্ণময় বাঙালি রাজনীতিবিদ প্রণব মুখার্জি যুগের। চিকিৎসাধীন থাকাকালীন প্রণব মুখার্জির কভিড পজিটিভ ধরা পড়ে। এ কারণে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় নিকট পরিবারবর্গ ছাড়া অন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
একই কারণে তাঁর মরদেহ সেনাবাহিনীর ‘গান ক্যারেজে’র পরিবর্তে শবাধারবাহী গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। দিল্লির রাজাজি রোডের বাড়ি থেকে শুরু করে লোদি রোড মহাশ্মশান পর্যন্ত সবখানেই কভিড প্রোটোকল মেনে শেষকৃত্য করা হয়।
পিপিই পরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি। পরিবারের অন্য সদস্যরাও পিপিই পরে যোগ দেন শেষকৃত্যে। এ ছাড়া শ্মশানে লোকসংখ্যা সীমিত রাখা হয়।
সেনাবাহিনী প্রথানুযায়ী তাঁকে গ্যান স্যালুট দেয়। তার আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর তিন প্রধান তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রণব মুখার্জি) ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার ছিলেন। সন্ধ্যায় প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতির দেহ অস্থি হরিদ্বারে বিসর্জন দেওয়া হয়।
এর আগে দিল্লির সেনা হাসপাতাল থেকে প্রণব মুখার্জির মরদেহ তাঁর লোদি রোডের বাসভবনে আনা হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী সব দলের রাজনীতিকরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (৩১ আগস্ট ২০২০ তারিখে) ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখোপাধ্যায় পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
তিন সপ্তাহ দিল্লির আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেলে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে সব পক্ষের শ্রদ্ধা পাওয়া এই রাজনীতিবিদের।
বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর গত ১০ অগাস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রণব। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার শরীরে করোণাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি চলে যান গভীর কোমায়। সেখান থেকে আর ফেরেননি।
তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার মিরাটি গ্রামে, ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভাষায় ছিলেন ‘আ ম্যান অব অল সিজনস’।
—ডেস্ক শুভবিশ্ব
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
ত্রাণ নিয়ে মৌসুনি দ্বীপে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্ররা
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস
যেসব পণ্যের দাম বাড়বে-কমবে