রামচরণের দিনকাল
জাহাঙ্গীর জয়েস
.
জীবনানন্দের জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় নদী। তাহারলামুর মাঝ বরাবর ভানুরমহলের পাশ দিয়ে গিয়ে হাওরে মিশেছে এরকম একটি ছোট্ট নদী। সম্পদখালী নাম। তার পাশেই নিরিবিলি একটা জায়গায় রামচরণের বাড়ি। বাড়ি বলতে এক চিলতে জায়গায় দুটি জীর্ণ চালাঘর। চালাঘরের পেছন দিকে একটা লাকড়ি, মোরগ রাখার খুপরি আর পলিথিনে মোড়া একটা পায়খানা। এই-ই।
যাই হোক। রামচরণরা ছিলেন চার ভাই। মরতে মরতে এখন বাকি আছেন শুধু রামচরণ নিজেই। মধ্যবয়স্ক। দরিদ্রতা আর অসুস্থতা যেন বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে আরো। বিয়ে করেছিলেন দু’বার। দু’জনই গত হয়েছেন। বাচ্চাকাচ্চাও নেই।
তার ছোট ভাই রুহিচরণের চার ছেলে মেয়ে। বড় ছেলে বিয়ে করেছে। তার আবার তিন সন্তান। অর্থাৎ ছোট ভাইয়ের বউসহ রামচরণের পরিবারে নয়টি মুখ।
সন্দেহ নেই পারিবারিক পেশা চর্মকারের হওয়ায় সমাজের এক কোণে প্রায় এক ঘরে বসবাস।
রামচরণের এক ভাতিজা কাজ করে দূর শহরের একটা মোরগের ফার্মে। এ ছাড়া পারিবারিক পেশায় যতসামান্য রুজি আর মাঝেমধ্যে আশপাশের লোকজন এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু সাহায্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে তাদের সংসার।
রামচরণ নিজে অসুস্থতার জন্যে কাজ করতে পারেন না। সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না।
বাধ্য হয়ে তাই বাড়ির দাওয়ায়ই বসে থাকতে হয় প্রতিদিন। সেখান থেকে দেখেন রাস্তা দিয়ে হরেকরকম লোকজনের আনাগোনা। রিকশা গাড়ি সাইকেলের যাতায়াত। বসে থাকার ক্লান্তিতে কোনো কোনোদিন ঘুমিয়ে পড়েন।
কখনো কখনো গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলে দেখেন, তিনিও চলে গেছেন দূরের কোনো হাটে। যেখানে তিনি দিব্যি সুস্থ-সবল তাগড়া যুবক। মানুষজনের ভিড়ে এদিক-ওদিক হেঁটে সদাই-পাতি করেন।
পরিচিত প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে চায়ের স্টলে আড্ডা মেরে রাত গাঢ় হলে একসময় বাড়ির দিকে পা বাড়ান অন্যদের মতো। তখন রাস্তাঘাট নির্জন হতে শুরু করে। রামচরণ হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দেন এবং গান ধরেন—
.
ও দয়াল প্রভুরে
আন্ধার রাইতে
বটতলায়
বাঁশি বাজায় কে!
.
ও দয়াল প্রভুরে
খালের পাড়ে
লেম জ্বলে
মাছ মারে কে!
.
ও দয়াল প্রভুরে…
.
…………………
পড়ুন
কবিতা
জাহাঙ্গীর জয়েসের চৌদ্দটি কবিতা
জাহাঙ্গীর জয়েসের একগুচ্ছ কবিতা
অণুগল্প
.
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা