চায়ের ঠেকে কয়েকজন
সুনীল শর্মাচার্য
চায়ের ঠেকে কয়েকজন
খবরের কাগজ হাতে রাধু মণ্ডল চমকে ওঠে : রাম, রাম! এটা কি? হিদু হয়ে গো-ভক্ষণ? ল্যাওড়ার দেশে হলো কি!
রাধুর কথায় রাজনীতির গন্ধ পেয়ে চমকে ওঠে ঘনশ্যাম! বলে, ‘অঘোরীদের মতো হিন্দুরা বাড়া সব খায়! মগজ বলে কিছু নেই?’
ফিদেল কাস্ত্রো কাস্তের ব্যবসায়ী। সে বলে, ‘আরে, সুবিধাবাদীদের স্বার্থে সব হয়। বুঝলে, তেল মারা চলছে। বোকাচোদার দেশে আমরাও বোকাচোদা! বুঝেও বাড়া ঘোরে থাকি!’
চা খেতে খেতে পেল্লাদ বলে, ‘শালা, হিদু-মুছলমান, হিদু-মুছলমান ক’রে ক’রে দ্যাশটাই গুল্লায় গেল রে!’
কথা শেষ হতেই কানামদনা বলে ওঠে, শালা, যার জন্যি দেশ ভাগ। সেই বিষবৃক্ষ রয়েই গেল!—মানুষ কি না খায়? বলো? প্রশ্ন ছুঁড়ে নিধিরাম চুপ।
ওদিকে ফুঁসে ওঠে কালাচাঁদ : ঢ্যামনামির কদর বেশি। এইসব খানকিপানা দেখে বেশ্যারাও লজ্জা পাবে!
—শালা, মিডিয়াও হয়েছে তেমন! শালারা আর খবর পায় না! যত্তোসব, আজেবাজে খবর!—বলে ওঠে কানু মাজি।
—কে কাকে ধর্ষণ করলো, কে কাকে খুন করলো, কার সাথে কার পরকীয়া-পিরিতি! এসবও এখন দামি খবর রে! হাই তুলে বলে ভানুরাম।
এতোক্ষণ চুপ করে ওদের কথা শুনছিল গজা মাস্টার। সে ফুঁসে ওঠে : আরে রাখ তোর ওসব কথা! দেশজুড়ে বাজার আগুন, কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছে না। শ্রমিক কাজ হারাচ্ছে। দেশের নেতারা সেসব নিয়ে কিছু বলছে না! আমাদের মন অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে!
মনা খুড়ো ওর কথা শেষ না-হতেই বলে ওঠে : শালা, দেশজুড়ে সন্ত্রাস চলছে, গুণ্ডারাজ চলছে, মহিলাদের নিরাপত্তা নেই। অথচ, রাজনৈতিক দলগুলো এর ওর পোদে কাঠি দিতে ব্যস্ত। ও খারাপ, আমি ভালো। ঢ্যামনামির শেষ নেই!
রসিকদাদু বলে ওঠে : আজ অসহিষ্ণু, অসহিষ্ণু বলে যারা চিল্লাচ্ছে, তাদের কওনা—দেশটা কবে সহিষ্ণু ছিল?…
কথার মধ্যেই বৃষ্টি পড়ে। কথার মধ্যেই ঝড়। ঝড়ো বেগে শান্তশিষ্টদা আসেন। বলে : ওরে চা-বাবা, একটা মিনিকাট আর দেশলাই দাও। সিগারেটটা অগ্নিসংযোগ করে বলে : তুমরা সব কি ভচভচ করতি চ? ওসব পচাল পেড়ে লাভ কি? ওরা, ওরা! আমরা, আমরা! ওরা এসব নিয়ে রাজনীতি ক’রে ফায়দা তুলবে, আর আমরা পাগল সব শুনবো। বুঝেও অবুঝ!
রহিম শেখ চুপচাপ শুনছিল এতোক্ষণ। সে সংখ্যাগুরুর চাপে ছিল। শান্তশিষ্টদার বক্তব্য শেষ হতেই বলে ওঠে : দেখো দাদারা, এসব রাজনীতি বুঝলে? সেই দ্যাশ স্বাধীনের কাল থেকেই। তুমাদের আমাদের মানে সাধারণ যারা তাদের কিছু হয়নি। যা হবার হয়েছে সেই তিনাদের। তিনাদের মধ্যে মুছলমান আছে, হিদুও আছে। সেই তিনারা যারা আমাদের শত্রু বানাইছে! পরস্পর খুনোখুনি করাইছে। গাজার সুখটানটা তারাই টেনেছে নিজেদের আখের গুছিয়ে। কী কও তুমরা?
গজা মাস্টার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে : হ্যাঁ ভাই, তুমি ঠিকই বলেছো! শুধু নেতাদের স্বার্থসিদ্ধিতে আমরা বোকাচোদা! নিজেরাই নিজের শত্রু হয়ে যাই। বধ হই!
…………………
পড়ুন
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প : সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
অনুগল্প
3 thoughts on “চায়ের ঠেকে কয়েকজন”