এবার চীনের নজর দেপসাং উপত্যকায়। ঘটনা কি? আনন্দবাজার পত্রিকা সেনাসূত্রের বরাত দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং হ্রদের পর এবার দেপসাং উপত্যকাও চীন সামরিক শক্তি দিয়ে দখলের চেষ্টা করছে।
গত ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সংঘাতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহতের পর অস্থিরতা কমাতে সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলছে।
একই সঙ্গে সীমান্তে অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে দুই দেশ, বাড়ছে নজরদারি—যা বাজাচ্ছে যুদ্ধের দামামা।
ইতোমধ্যে গালওয়ান উপত্যকাকে চীন নিজেদের দাবি করলেও তাদের এই দাবিকে অগ্রহণযোগ্য বলেছে ভারত।
এবার দেপসাং উপত্যকাও চীনারা দখলে নেওয়ার সুযোগের অপেক্ষায়।
আনন্দবাজারকে এমন শঙ্কার কথাই জানালেন জম্মু-কাশ্মীরে সেনার ১৬ কোরের সাবেক কমান্ডার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামেশ্বর রায় বলেন,
‘এতদিন দেপসাং ভ্যালিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা চীনের পক্ষে মুশকিল ছিল। কারণ পাহাড়ের উপরে দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটি থেকে ভারত ওই এলাকায় কর্তৃত্ব করে।
কিন্তু এখন চীনের সেনা দেপসাং উপত্যকার দক্ষিণে, গালওয়ান উপত্যকার পাহাড়ের মাথায় চলে এসেছে।
ওদিকে, প্যাংগং হ্রদের মধ্যে ঢুকে আসা ফিঙ্গার ফোর নামক পাহাড়ের মাথাতেও চীনের সেনা ঘাঁটি গেড়ে বসেছে।
এর পরে চীন দেপসাংতেও সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করবে।
বাস্তবের জমিতে এর অর্থ হল, দেপসাং ভ্যালি থেকে একেবারে নীচে ডেমচক পর্যন্ত কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা চীনের রয়েছে।’
সেনা সূত্র বলছে, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের এই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। কারণ দেপসাংয়ে ইতোমধ্যেই সেনার সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছে চীন।
সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকায় সেনার সঙ্গে ট্যাঙ্ক, কামানও মোতায়েন করতে শুরু করেছে।
ওই এলাকায় দ্রুত সেনা মোতায়েনের জন্য রাস্তাও তৈরি করছে চীন।
রামেশ্বরের আশঙ্কা
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামেশ্বর আরো আশঙ্কার কথা শোনালেন,
‘দারবুক থেকে শিয়ক হয়ে দৌলত বেগ ওল্ডি বিমানঘাঁটি পর্যন্ত যে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তা আমাদের এলাকায় হলেও তা চীনের মাথাব্যথার কারণ।
চীন পাহাড়ের উপর থেকে এই রাস্তায় গতিবিধির উপর নজরদারি করতে চায় বলেই,
গালওয়ান ঘাঁটির ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার তোয়াক্কা না-করে পাহাড়ের উপরে চলে এসেছে।
সেখান থেকে চীন দৌলত বেগ ওল্ডির দিকে যাওয়া রাস্তায় নজরদারি করতে পারবে। ফলে সামরিক দিক থেকে আমাদের দৌলত বেগ ওল্ডি দুর্বল হয়ে পড়লো।’
দেপসাং ভ্যালিতে চীনের সেনা ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রায় তিন সপ্তাহ ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল।
আগস্ট মাসেই দেপসাংয়ের উপরে কর্তৃত্ব করতে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিমানঘাঁটি দৌলত বেগ ওল্ডি চালু করে দেয় ভারত।
এ বার গালওয়ান বা প্যাংগং থেকে চীনের সেনাকে সরানো সহজ হবে না-বলেই মনে করছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
তার ভাষ্যে, অনেকে বলছে, চীনের সেনা শীতে সরে যাবে। সরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে কংক্রিটের বাঙ্কার তৈরি করতো না।
আমাদের জওয়ানেরা শীতের সময় ওই ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় থাকতে পারলে, ওরা পারবে না কেন?
সমস্যার সমাধানে রামেশ্বর
সমস্যার সমাধান বাতলে দিলেন রামেশ্বর, ‘আমি যদি মনে করি, আমাদের পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার উপায় নেই, তাহলে তাদের অন্তত ওখানেই আটকাতে হবে।
গালওয়ান, প্যাংগং বা দেপসাং কোথাও এগোতে দেওয়া যাবে না। চীন কথা বোঝে না। সমানে সমানে শক্তি হলে তবেই গুরুত্ব দেয়। সেটাই করতে হবে।’
—ডেস্ক শুভবিশ্ব
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
ত্রাণ নিয়ে মৌসুনি দ্বীপে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্ররা
বাগদাদে করোনা হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ৮২ জনের মৃত্যু
কবি শঙ্খ ঘোষের জীবনাবসান