দশটি কবিতা
সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের দশটি কবিতা
জন্মভূমি আজ
জন্মভূমি আজ শ্বেতবসনা
রক্তে তার শিহরণ আসে না,
শোকহরণ মন্ত্র পাঠে—
বাদ-প্রতিবাদ আর জাগে না!
.
জবাকুসুম সূর্য আলোক
পোড়ায় না আর আঁধার শোলোক,
ক্লান্তি ভরা দেশের মানব
ঘুমিয়ে আছে মৃতের ঝলক!
.
ভালো থাকে
আম-কাঁঠাল বট বীথি আজ আর
কোনো শুদ্ধ আকাশ দেখে না,
কার দুঃখে কার দরদ ওঠে—
কেউ জানে না, কেউ বোঝে না!
.
আকাশে নষ্ট চাঁদ, আকাশে কষ্ট বিষ
হাওয়াজুড়ে হাওয়া ওঠে পিশাচ,
কেউ জানে না, পাপ হয় না মাফ!
দেশজুড়ে এখন দুধকলা দিয়ে পোষা সাপ
হিস্ হিস্ শব্দ তুলে ছাড়ে বিষ নিঃশ্বাস…
.
দেশ লুটেপুটে উজ্জ্বল হয় রাজার তাজ,
ভালো থাকে আমাদের মাননীয় সমাজ!
.
আপিলা চাপিলা
আপিলা চাপিলা মাছের মাসি
ধর্ম বাজায় কেউটের বাঁশি,
দেশের মুখে মরার হাসি
আমজনতার দুঃখ রাশি,
কেউটে রাজার মনটা বাসি
বদ-ভাবনায় বানে ভাসি,
মানুষ মরে রোগে কাসি
রাজা দিব্য আছেন কাশী!
.
আপ্পন ঝাপ্পন সকাল ভোর
রাজা বেইমান, রাজা চোর!
.
কার ঘরে বাস
কার ঘরে বাস করিস তোরা
কার অন্ন খাস?
বুঝতে গিয়ে পাঁজর কুঁজো
হাড়ে গজায় ঘাস!
.
রাজা ভাঙে রাজার হাঁড়ি
এখন আমরা বুঝতে পারি—
নিত্য নতুন আইন করে
জনতার দেয় বাঁশ!
নিজের গালে নিজেই মারি
চড়থাপ্পড় ঠাস ঠাস!
.
বেহুলা ভাসে
ভেলা ভাসিয়ে বেহুলা ভাসে
প্রাণ হলো যে তুষা,
চোখে আঁধার, আসে না তো
ভুবনমোহিনী ঊষা!
.
মহাকাল হাসে কেমন তর
বোঝে না নারী কোমল,
শীতল মুখোশ পড়েছে কাল
ঈশ্বরী নয় অমল…
.
আহারে! বেহুলা আবাগী নারী
ভাতার খাগী মেয়ে,
সমস্ত রাত ভেলা ভাসায়
মৃত লখিন্দর নিয়ে!
.
গাঙুরের জল, গাঙুরের জল
বোঝে না নারীর ব্যথা,
দেবতার শাপে পোড়ে মানুষ
ধর্মের যতো কাঁথা!
.
যে যায় রে
যে যায় রে, সে যায় চলে
দূর অজানায়,
যকের ধন আগলে রাখিস
কীসের ভরসায়!
.
জীবন তো পদ্মপাতায়
বিন্দু বিন্দু জল,
বাতাস পেলে টলকে পড়ে
আজব দেখি ছল!
.
চিরহরিৎ বৃক্ষ লতা
মাঘের শীতে মরে,
ঢের ভালো কি ভাবতে গিয়ে
সবাই দেখি মরে…
.
অমরত্ব কোথায় রে মন
অমরত্ব তো নেই,
ইতর স্পর্ধা ছলকে ওঠে
হৃদয় হারায় খেই!
.
এই পৃথিবী জাহান্নাম তো
শ্রেণী ভাগে হয়,
মনুষ্যত্ব দিনকে দিন
ধর্মে মজে রয়!
.
ঘুমের ওষুধ খেয়ে খেয়ে
মানুষ হারায় ঘুম,
বিবেক বুদ্ধি শূন্য করে
সাপের গালে চুম!
.
আতা গাছে
আতা গাছে নেই তোতা পাখি
ডালিম গাছে নেই মৌ,
সবার ঘরে আজ সেবাদাসী
কোথায় সোনার বৌ!
.
ঝগড়াঝাঁটি অভাব শুধু
শান্তিতে নেই কেউ,
দেশের রাজা খাট্টাস হলে
রক্ত চোষে ফেউ!
.
বুকের রক্ত
বুকের রক্ত ঢালে লোকে
নেতা খায় তামাক,
গদি লুটে মহান নেতা
দেখায় কি দেমাক!
.
মুখোশ ভরা এই ইতিহাস
দেশ নিয়ে তামাশা,
সূর্য ওঠে গভীর অর্থে
যায় না কুয়াশা!
.
জন্ম থেকে
জন্ম থেকে শুনছি এই কান্না,
ভাত দে, মা ভাত দে,
সকাল সন্ধ্যা গড়ায় দুপুর
ভাত দে, মা ভাত দে!
.
দেশে কোথায় ভাত?
কার আছে, কার হাত!
.
জনম দুখী মা আমার
জ্বলছে দাউ দাউ,
জন্ম থেকেই ভাতের জন্য
শুনছি হাউমাউ!
.
ঘুমের মধ্যে
ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি
কুঠার নিয়ে আসে,
হৃৎপিণ্ড দু’ভাগ করে
বাঁকা ঠোঁটে হাসে!
.
চোখের পাতা কাঁপে
বুকের গহীন কাঁপে,
স্বপ্ন আমার অভিশাপ
জিয়ন মরণ মাপে!
.
ঘুম ভাঙে চিৎকারে
স্বপ্ন পালায় ফুৎকারে,
রক্তে তখন দামাল ঢেউ
বয় যন্ত্রণা বাহারে!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের বারোটি কবিতা
বন্ধু-বান্ধবীর জন্য একগুচ্ছ কবিতা
মুক্তপদ্য
সংশ্লিষ্ট আরো লেখা
নাসিমা খাতুনের কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি