shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

Poems by Sunil Sharmacharya

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

ঘুমের জানালা দিয়ে

ঘুমের জানালা দিয়ে ঢোকে হাওয়া

তারপর গুঁড়ো গুঁড়ো স্বপ্নের কুচি…

ঘরের কড়ি-বরগা ছুঁয়ে ফিসফিসিয়ে

কানে মুখ রেখে বলে : ওঠো, আর কত…?

.

বাইরে রাত কাবার, গাছে গাছে পাখির গীত

পথে পথে কাদের পদধ্বনি?…

.

নাভিদেশ থেকে ঘুম উড়ে চোখে অনুচ্চকিত

তারপর শব্দহীন চোখের পাতায় কেঁপে কেঁপে

মন্ত্র হয়ে ওঠে : উষসী জাগ্রত…

.

জানালায় দাঁড়িয়ে দেখি ভোর। দেখি—

একটি দোমড়ানো গাছ, স্নায়ুশিরা,

বাকল ও প্রতীক,

কুয়াশা ঢাকা কিছু অন্ধকার তখনো…

.

ভাবি, যা চোখের আড়ালে থাকে, কিংবা দূরাগত,

মন্ত্রধ্বনির মতো কথা বলে, তাও দেখতে সচেষ্ট…

.

রাতের কথা ভাবি, তারার তিমির মেখে

ঘুম কখন চিন্ময় প্রকৃতি…

.

নিশি-পাওয়া কার স্বপ্নে

ঘুমের জানালা দিয়ে নিত্য আসা-যাওয়া শুধু।

.

যাদুনদী

নদীর মিঠেল গন্ধে স্মৃতি টগবগ করে ওঠে—

সন্ধ্যা আগমণে দু’কূল হয়ে ওঠে অন্ধকার,

ছোট ছোট ঝোপঝাড় তখন ছোট ছোট

আঁধার টিলা; বর্ষা হাতে অবিকল নারীর

আদলে নদী, ভিজে হাওয়া

স্রোতস্বিনী জলমাখা সুর,

দূরে ভাটিয়ালি গেয়ে মাঝি—

আরো দূরে কার টানে নৌকো বেয়ে যায়…

হীরক-ঠিকরানো ব্যথা নদীর ঢেউয়ে,

বুকের কাঁপনে গেঁথে দেয়,

বিরহী জানে, যক্ষ আমি—নদীর পাড়ে বসে

ফুল ছিটানো গন্ধে শূন্যতা ওড়াই…

.

আকাশে চাঁদ ওঠে, চাঁদ হাসে—

বর্ষা হাতে অবিকল নারীর আদলে নদী

ডুব ডুব অথৈ ভাসিয়ে দু’কূল,

আমাকেও ভাসিয়ে কোথায় টেনে নেয়!

.

এখন সমস্ত রাস্তার মুখ

এখন সমস্ত রাস্তার মুখ ঘোরানো

পথে হাঁটলে লোকজনের বিরক্তি, চিৎকার…

.

রাতে রাস্তায় তারা-খসা নক্ষত্রের ঝিকমিক আলো

পথে হাঁটলে ছিনতাই, হত্যা, ভয় অন্তঃস্থল কাঁপানো

আইনকে বুড়ো-আঙ্গুল দেখিয়ে আইনহীন গাড়ি হাঁকায়…

.

চতুর্দিকে অন্ধকার, দেশ ভরা তছনছ…

মানুষের বাঁচার মুহূর্ত

কাজেকর্মে, কথাবার্তায় গিঁট ধরে থাকে—

.

থমকানো শ্বাস-প্রশ্বাসে রক্তের কম্পন

কতক্ষণ বেঁচে থাকে?

কতক্ষণ ঘর ফেরা অপেক্ষা থাকে!

.

সমস্ত সম্পর্ক

সমস্ত সম্পর্ক আলগা হয়ে যাচ্ছে

সমস্ত প্রতিশ্রুতি মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে…

.

এখন ঘরে বাইরে ঢপ আর হাম-বড়া ভাব

কেউ আর কারোর পেছনে থাকে না

স্বার্থ ছাড়া…

অপ-হাওয়ার স্পর্শ সবার গায়ে লেগেছে

বিনীত ব্যবহার ভাবা যায় না!

.

এখন ধ্বংসোন্মুখ সমস্ত কিছুর এবড়োখেবড়ো

শরীর

ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে-বাইরে ইতঃস্তত!

.

স্বার্থপর ভাবলেও দোষ নেই

এখন নিজের চৌহদ্দির মধ্যে থেকে নিরাপদ থাকো

যেমন খুশি নাচো, হাসো, কিংবা গান গাও

রক্তে গুঞ্জন উঠলে চুপচাপ থাকো

.

মাদল বাজে রাতে, সাঁওতালদের ডেরায়

মহুয়ার নেশায় বুদ…

তুমিও ঘরের মধ্যে বিদেশি তরল খেয়ে

হাসো, নাচো, বুদ…

.

এখন সবাই ঘরে থাকে, নিজেকে নিয়েই ভাবে

কেউ কারোর জন্য ভালোবাসা দেখায় না!

.

সবার কল্যাণে নির্বাণ সুখ এখন নেই

কোলাহলে ডুবে যাচ্ছে চারপাশ

আম্রবনে, ঝোপের আড়ালে দোলে রক্তপাখির মৈথুন

আকাশের নীল দিগন্ত ছুঁয়ে সুবর্ণ রেখায়

তোমার আমার ইচ্ছেগুলো শূন্যতায় মশগুল…

.

এখন নিজের চৌহদ্দির মধ্যে থাকো

ঝঞ্ঝাবাতাস বইলে কোনো আতঙ্ক নেই

সজীব মুখের ডৌলে, তোমার দুঃখবোধ নেই

অর্থ আর জৌলুস নিয়ে নির্বিবাদে কাটিয়ে দাও

সময়…

.

স্বার্থপর ভাবলেও দোষ নেই—

নিজে বাঁচলে বাপের নাম, সবাই জানে!

.

কোনো সৌরভে

কোনো সৌরভে আর মুগ্ধ হবো না

কোনো কুয়াশা আর দৃষ্টি ঝাপসা করবে না

বিশ্বাস ন্যস্ত করি মাটির পাঁজরে,

এক চিরন্তনী মাটিতে!

.

এই চোখের দৃষ্টি

এই চোখের দৃষ্টি পিচ্ছলে পড়ে অন্ধকারে

এই চোখের দৃষ্টি পিচ্ছলে পড়ে নক্ষত্রে

কার ছোঁয়া রাতের বাতাসে কাঁপন লাগায়

কার কথা রাত হলে মনে ব্যথা জাগায়

.

ছোঁয়াছুঁয়ি চোখে ধরে প্রহর করি পার

কি যে স্তব্ধতায় কি যে ভাবনা আমাকে

পেয়ে বসে; উদাস হবার আয়োজন করে

.

একা একা দৃষ্টি মেলে রাত্রি করি পার

ভালোবাসার চাঁদ আলোতে ছড়ায় অন্ধকার

.

তবু রাতের ভেতর রাত দেখি গাঢ়তর

চেনা জিনিস অচেনা হয়, চোখও অন্ধ

কি যে স্তব্ধতা আমাকে মৌন করে মৌনতায়

.

পরস্পর মুখোমুখি

হঠাৎ কানে বেজে ওঠে সেই কুজন

অতি কম্পমান প্রেমাতুর অনুভূতি

নির্জনে দুজনের বুক কাঁপে, ঠোঁট কাঁপে

হাতের স্পর্শে হাত, সাপের পাঁকে পাঁকে

ভেঙেছে নির্জন…

.

তুমি আমি দুজনেই অতি কম্পমান

এক মহামৌন উষ্ণতায় সুখ খুঁজে খুঁজে

প্রেমার্ত, নীরব, যুদ্ধে ভীষণ শান্ত…

.

পরস্পর মুখোমুখি, বসে আছি—

নির্জন, মহানির্জন আমাদের আচ্ছন্ন করেছে

.

কথার বাণে

কথার বাণে বিদ্ধ হয়ে

ব্যথা পেয়ে গেছি—

জন্ম জন্ম আমি

.

একজন্ম বাউল ছিলাম

এ-জন্ম বৈরাগী

.

অবশেষে

অবশেষে, ধরা দিলে এক মধ্যাহ্নে

নির্জন গহন বনের ধারে,

শিকারির তীব্র ইচ্ছা তোমাকে স্পর্শ করে—

দ্রুত, অতি দ্রুত, ছিন্নভিন্ন, ক্ষুধার্ত, তৃপ্ত যেন

অবশেষে

.

আমি উচ্ছন্নে গেছি

বারবার বলি, আমি উচ্ছন্নে গেছি…

এ-সমাজ, এ-দেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি

ভেঙেচুরে ছড়িয়ে দিই জলাঞ্জলি…

.

কি আছে? কি-বা থাকে আর বাকি?

যত দিন যায়, যত কত রাত আসে,

সময় জটিল হয়, ভেঙে ফেলি চুরচুর

যৌগিক সভ্যতার কৃত্রিম ঘুণো চাবি!

.

কোথায় যাবি? মন, তুই কোথায় যাবি?

উচ্ছন্নে যেতে যেতে আরো পতনে আছি!

…………………

পড়ুন

কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি

নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য

প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতাগুচ্ছ

অন্যভুবনের কবিতা

ঘোড়া : সুনীল শর্মাচার্য

মুহূর্তের কবিতা

অনুভূতি বেজে ওঠে

আমার কবিতা

সনেটগুচ্ছ

সুনীল শর্মাচার্যের সনেটগুচ্ছ

ভারতীয় লিমেরিক

সনেট পঞ্চ

সুনীল শর্মাচার্যের বারোটি কবিতা

বন্ধু-বান্ধবীর জন্য একগুচ্ছ কবিতা

শোনো, বলি হরিদাস

সময় অসময়ের কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের কবিতা

মুক্তপদ্য

ভারতীয় কোলাজ

ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...