shubhobangladesh

সত্য-সুন্দর সুখ-স্বপ্ন-সম্ভাবনা সবসময়…

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

Retail talk all around
How many problems I am in
খুচরো কথা চারপাশে

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

সুনীল শর্মাচার্য

শক্তি পূজোর চিরাচরিত

আমাদের ভড়ং সর্বস্ব শক্তিপূজোর চিরাচরিত সহিংস সংস্কার দেখে আতঙ্কিত হই। গান্ধীজির একটি উক্তি মনে পড়লো—মানুষকে হিংসার শিক্ষা দিতে হয় না।

প্রাণী হিসাবে মানুষ সহিংস। সেই রামায়ণের কালে, নরবলি প্রথার যখন চল ছিল, তার ফলে রাজার কুমার রাম-লক্ষণকে প্রণাম করার আদব শেখাতে গিয়ে মহীরাবণকে সুগ্রীবের উদ্যত খাঁড়ায় প্রাণ দিতে হয়েছিল—এত যুগ পরেও আজো আমাদের রক্ত ক্ষরণে সমান বিশ্বাসী রেখেছে।

আমরা শিক্ষা-দীক্ষায়-মননে-বিজ্ঞানে উন্নত প্রযুক্তিতে যতই ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী হই না কেন, সংস্কারের কাছে এখনো আমরা শিশু।

দীপাবলিতে আমরা আলো জ্বালি, সে আলোর দীপ্তি আমাদের মনের অন্ধকারকে নাশ করে না। দেবীমূর্তির সামনে আমরা পাঁঠা-মোষ-ভেড়া-পায়রা বলি দিই,তবু আমাদের মনের মধ্যেকার পশু দিব্যি বেঁচে বর্তে থাকে।

সব দেখেশুনে মনে হয়, কবির কথাই ঠিক—

‘মাটির প্রতিমা পূজিস্ রে তোরা

মাকে তো তোরা পূজিস্ নে।’

—কই আমাদের কারোর মনে একবারও তো এমন প্রশ্ন উঁকি মারে না, খড়ের কাঠামোর মৃন্ময়ী প্রতিমার আড়ালে যে চিন্ময়ী মায়ের চিরন্তন উপস্থিতি, তিনি যদি এই বিশ্বব্রম্মাণ্ডের সকলের জননী হন, তবে সন্তানের রক্তপান তো দূরের কথা, সন্তানের সামান্যতম শোণিত পাতে মা অশ্রুসজলা হবেন!

কিন্তু নীতিকথা তত্ত্বকথায় আমাদের চিরদিন অনীহা, তাই নিজের হাতে যাবতীয় অকর্ম-কুকর্ম করেও ‘তোমার কর্ম তুমি কর মা লোকে বলে করি আমি’ বলে সেই রক্তাক্ত হাত ধুয়ে ফেলি।

বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসে যে তান্ত্রিক কাপালিকের গল্প শুনিয়েছিলেন, সে এখনো পুরুতঠাকুর হয়ে বেঁচে আছে আমাদের মধ্যে।

এক গোবিন্দমাণিক্যের কী ক্ষমতা ক্রূর ষড়যন্ত্রী রঘুপতির হাত থেকে অপর্ণার ছাগ্ শিশু বা জয়সিংহের নিষ্পাপ সারল্যকে রক্ষা করে, কারণ হাসি-তাতার মতো রঘুপতি যে ‘এত রক্ত কেন’ প্রশ্নে শিহরিত ও পীড়িত হয় না।

বরং এক অমোঘ অর্থহীন হত্যা-লোলুপতার কাছে আত্মসমর্পণ করে রঘুপতি দ্বিধাহীন উচ্চারণ করে,

‘কে বলিল হত্যাকাণ্ড পাপ।

এ জগৎ মহাহত্যাশালা

জানো না কি প্রত্যেক পলকপাতে লক্ষ কোটি প্রাণী

চির আঁখি মুদিতেছে। সে কাহার খেলা?

হত্যায় খচিত এই ধরণীর ধূলি।

প্রতিপদে চরণে দলিত শতকীট

তাহারা কী জীব নহে? রক্তের অক্ষরে

অবিশ্রাম লিখিতেছে বৃদ্ধ মহাকাল

বিশ্বপত্রে জীবের ক্ষণিক ইতিহাস।

হত্যা অরণ্যের মাঝে, অগাধ সাগরজলে, নির্মল আকাশে

হত্যা জীবিকার তরে, হত্যা খেলাচ্ছলে,

হত্যা অকারণে, হত্যা অনিচ্ছার বশে—

চলছে নিখিল বিশ্ব হত্যার তাড়নে!’

হত্যার জন্য কখনো হত্যার কৈফিয়ত হতে পারে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজনীতির যুপকাষ্ঠে আজকাল নরবলি চলে আকছার ‘খুন কা বদলা খুন’ নীতির অনুসরণে।

চোখের বদলে চোখ, ধড়ের বদলে ধড় নেওয়ার মানসিকতা আদতে কিন্তু আমাদের ঘাতক-সত্তার বহিঃপ্রকাশ—যা অনেকটা এসেছে পশুবলি প্রথা থেকে।

তাই আজকের এই হিংসার আবহে দু-পাঁচটা পৈশাচিক নরহত্যায়ও আমাদের হৃদয়-বৈকল্য ঘটে না!

…………………

পড়ুন

কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য

সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা

সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ

ধর্ম নিয়ে : সুনীল শর্মাচার্য

লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : কত রকম সমস্যার মধ্যে থাকি : সুনীল শর্মাচার্য

খুচরো কথা চারপাশে : শক্তি পূজোর চিরাচরিত : সুনীল শর্মাচার্য

About The Author

শেয়ার করে আমাদের সঙ্গে থাকুন...