
খুচরো কথা চারপাশে
নস্যি নিয়ে দু-চার কথা
সুনীল শর্মাচার্য
নস্যি নিয়ে দু-চার কথা
আজ হাঁচির জন্য কয়েকবার নস্যি সেবন করলাম। এই নেশায় অভ্যস্ত হওয়া খুবই সোজা এবং এতই আরামদায়ক যে, ত্যাগ করা খুবই কঠিন। পরন্ত নস্যি সেবনের অপকারিতা সম্পর্কে কোনো প্রচার নেই।
‘নস্যি’ নয়, কথাটা ‘নস্য’। তামাকপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে তৈরি হয় নস্য। শব্দটি এসেছে বাংলা নাসা অর্থাৎ নাক থেকে। আয়ুর্বেদীয় দ্রব্যাভিধানে নস্যের নাম—নস্য, নস্ত, নাবন। নাসিকাতে দেয় তাম্রকটু চূর্ণ, নাস চিকিৎসার ক্রিয়াবিশেষ।
ভারতের কুলর্ণব তন্ত্রে নস্যকে নাকের হিতকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং, নস্য ব্যবহার উপকারী বলে ধারণা প্রচলিত।
‘নস্য’ সম্পর্কে প্রায় কুড়ি বছর পূর্বে প্রথম সাবধানবাণী শোনান সৌদি আরবের বিজ্ঞানীগণ। ওই সময়ে সৌদি আরবে অধিকাংশ মানুষ ছিল নস্যাসক্ত।
সৌদির বিজ্ঞানীগণ সমীক্ষায় দেখেন, নস্যি গ্রহণে মানুষ অপরিসীম আরাম, স্বস্তি ও আনন্দ উপভোগ করছে। এই প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হলে নস্যি সেবকদের স্বাস্থ্যের হানি ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ নেশা পরিত্যাগ করতে পারছেন না।
এই সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে সৌদি আরব নস্য নেওয়া বন্ধ করতে কঠোরভাবে নস্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেন। ধরা পড়লে জরিমানা।
ধূমপানে ক্যানসার ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে। এর বিরুদ্ধে অহরহ সর্বত্র দেখা যায় সাবধানবাণী। নস্যি সম্পর্কে কোনো সতর্কবার্তা নেই।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেথেস্টার ন্যাশন্যাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের গবেষক শ্রীমতী ডেগরা উইন বলেছেন, অতিরিক্ত নস্য ব্যবহার মুখ ও গলায় ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
তিনি সমীক্ষায় দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব গ্রামাঞ্চলে নারীদের মুখ ও গলায় ক্যানসারের প্রদুর্ভাব বেশি। কারণ এই অঞ্চলের নারীরা নস্য ব্যবহারে অধিক অভ্যস্ত।
উইনের সহযোগীরা ২৫৬ জন নস্য নেওয়া রোগাক্রান্ত নারীর পরিসংখ্যানে দেখেছেন, নস্য ব্যবহারকারী ৪৫ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্ত। নস্য ব্যবহারে গলায় ক্যানসারের সম্ভাবনা ৪ থেকে বেড়ে ৫০-এ দাঁড়ায়।
যতই বিজ্ঞানীরা নস্যির বিরুদ্ধে বলুন, রোমান্টিক ইংরেজ কবি কোলরিজের মতে, মানুষের নাসিকার অস্তিত্বের একমাত্র যৌক্তিকতা হলো নস্য! নস্যই যদি না থাকে, তাহলে নাসিকার কি প্রয়োজন?
সুকুমার রায়ের একুশে আইন কবিতাতেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ছড়ার আগে যদি কেউ বিনা টিকিটে হাঁচে, তাহলে কোটাল এসে নস্যি ঝাড়ে। একুশ দফা হাঁচিয়ে মারে।
আবোল তাবোলের এই কবিতা আরবি অনুবাদ করে সৌদিতে পাঠালে ওই দেশের নস্য নিবর্তনমূলক আইন হয়তো প্রত্যাহৃত হয়ে যেত।
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
16 thoughts on “নস্যি নিয়ে দু-চার কথা”