খুচরো কথা চারপাশে
আত্মসংকট থেকে
সুনীল শর্মাচার্য
আত্মসংকট থেকে
আত্মসংকট থেকেই লেখক বা কবি লেখেন এবং এই সংকট যার যত তীব্র, যে যত অনুভূতিপ্রবণ, তার লেখার গভীরতা, ব্যাপ্তিও বেশি। স্থান, কালমাত্রা, পাত্রপাত্রী, সমাজ, দেশ, আর্থকাঠামো, রাজনৈতিক পরিস্থিতি—এসব লেখায় ধারণ করে, কারো তা উচ্চকিত, কারো লেখায় তা অন্তঃসলিলা। বোধ তা নিয়ন্ত্রণ করে।
কিন্তু ইদানীং দেখি এর উল্টো! সমস্যা এলে, আত্মসংকট এলে আমাদের লেখক, কবিবৃন্দের একটা বড় সংখ্যক নিজেকে তা থেকে দূরে সরিয়ে শীত ঘুমে চুপ থাকেন!
তারা একটা তত্ত্ব ঝেড়ে নিজেকে সরিয়ে রাখেন লেখার সময়। ভাবে, উইসডম কাজ করার পরিসর পাবেন। এটাকেই এলিয়ট বলে ছিলেন—‘নেগেটিভ ক্যাপাবিলিটি’! নেগেটিভ ক্যাপাবিলিটি তাদের সৃজনশীলতাকে বন্ধ্যা করে।
উইসডম মানে আত্মনিরপেক্ষ দেখার ক্ষমতা বা দৃষ্টি। এটা অনেকটা ধু ধু শূন্যতার কাছাকাছি। মানুষে আছি, মানুষে নেই, জগতে আছি, জগতে নেই, নির্বিকার পরিস্থিতি! সমস্ত সংকট, ঝামেলা থেকে দূরে গিয়ে সমাজবিমুখ আত্মঘাতী সন্ন্যাসী।
ফেসবুকে চোখ রাখলে দেখি, ব্যক্তিগত প্রচার, আত্মশ্লাঘার অভিব্যক্তি! চারদিকে এত অস্থিরতা, নৈরাজ্য, হতাশা, ক্রন্দন, জীবনযাপনে লড়াই কিছুই তাদের স্পর্শ করছে বলে মনে হয় না। এ কেমন সমাজ? এ কেমন মানুষ?
ক্ষুধা যখন চৌচির করে দিচ্ছে সারা বিশ্বকে। অনাহারে যখন নিত্যদিন কত কত মানুষ মরছে। উদ্ভট চিন্তাধারা যখন দেশ, জাতিকে এলোমেলো করছে। তখন বিবেকবান তথাকথিত শিক্ষিত জন, লেখক, শিল্পীগণ যেন আপনভুবনে মগ্ন! কোনো তাপ উত্তাপ নেই।
বিত্তবান যারা তারাও ভাবুন—টাকা আছে, টাকা নেই। জীবন কখনোই জলবৎ তরল নয়। তার ওঠানামাও আছে! আজ যা আছে, কাল তা থাকবে না! কালের নিয়মে।
উইসডম আমার নেই। আমি গড্ড মুর্খ। জ্ঞানগরিমা নেই। জ্ঞান দেওয়া আমার শক্তির বিরুদ্ধ। তবু বিবেক নামক পোকার কামড়ে ছটফট করি অহরাত্র। আমার কিছুই নেই আমি জানি। আমি কোনো তত্ত্বও মানি না। আর কিছু করার নেই বলে লিখি!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
17 thoughts on “আত্মসংকট থেকে”