খুচরো কথা চারপাশে
অহল্যার প্রতি
সুনীল শর্মাচার্য
অহল্যার প্রতি
অহল্যার প্রতি আমার একটু দুর্বলতা আছে। রামায়ণে যেসব উল্লেখযোগ্য নারী রয়েছেন, তারা পুরুষতন্ত্রের শিকার। অহল্যা একজন। তারা, মন্দোদরী বহু ভোগ্যা, সীতা সন্দেহের তিরে জর্জরিত। কৈকেয়ী বহুভোগ্যা না-হলেও, তাকে খল বানানো হয়েছে।
অহল্যা প্রেমিকা। তার ইন্দ্রপ্রেম মেনে নিতে পারেনি গৌতম, মানে তার স্বামী। ফলে, ইন্দ্র আর অহল্যার সঙ্গমকে ব্যভিচার বলেছেন রামায়ণ প্রণেতা বাল্মীকি। গৌতমের অভিশাপ শুনে অহল্যা পাষাণ হয়েছেন। অথচ অহল্যা বলেছেন, এই সঙ্গমে আপনি তৃপ্ত ছিলেন। আমিও।
নারীর এই প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি পুরুষ মানতে পারেনি কখনো। রামায়ণ, এদিক থেকে দেখলে, পুরুষ সংহিতা। না হলে, রাবণ বধের পর তার বিধবা পত্নীকে দেবর বিভীষণকে বিয়ে করতে বলা হবে কেন? এটা রাজতন্ত্রের নিয়ম, বললেও সেই একই কথা থেকে যায় যে, রাজা মানে পুরুষ, ঈশ্বর।
দেশের সকল নারী তার উপভোগ্য। তারা বালীপত্নী। বালীনিধনের পর, তাকেও স্ত্রী হতে হয়েছিল সুগ্রীবের। মানে সেই পুরুষবিধানে। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করতে হয়, রামায়ণ-মহাভারতের এই বহুগামিনীদেরই সতী হিসেবে পূজা করার বিধান দিয়েছে পুরুষই!
এটা স্ববিরোধিতা, না-কি নিছক ভণ্ডামি? অহল্যা যদি সতী হয়ে থাকে, তাহলে পাষাণ হতে হলো কেন তাকে?
অহল্যার প্রতি
বাৎসায়ন ও নারী মুক্তির কথা
বাৎসায়ন তার কামসূত্র গ্রন্থে ৬৪ কলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে নারীর রূপসজ্জা যেমন এনেছেন, তেমনই নারীকে পুরুষের চোখে কীভাবে মোহময়ী হয়ে উঠতে হবে, তার প্রশিক্ষণের কথাও বলেছেন।
পুরুষ এখানে নাগরক, নারী এখানে বনিতার ভূমিকায়। এখানেই প্রথম লক্ষ্য করা যায়, নারীকে ভোগের পণ্য হিসেবে, উপস্থাপকের প্রস্তুতিপর্ব এই ৬৪ কলাতেই নিহিত। পুরুষতন্ত্র তার স্বার্থে যেমন রচনা করেছে মনুসংহিতা, তেমনি কামসূত্রও। বেশ্যাবৃত্তিকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই গ্রন্থে।
নারীর মুক্তির প্রশ্নে বেশ্যালয় নামক এই সর্বশক্তিমান প্রতিষ্ঠানটিকে সবার আগে বন্ধ করে দিতে হবে। না-হলে শেষ পর্যন্ত নারীমুক্তির স্বপ্ন থেকে যাবে নিখাদ এক স্বপ্নই। নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে ভেবেছে এই পুরুষতন্ত্র—যা পুরোহিত বা মোল্লাতন্ত্র হয়ে শিকড় গেড়েছে বহু বহুদূর। নানা শাখা-প্রশাখার মধ্যে এই বেশ্যাবৃত্তিও প্রধান একটি মাধ্যম—যা নারীকে ভোগ্যপণ্য করে তুলেছে।
বিজ্ঞাপন থেকে বিনোদন সর্বত্র এরই দীর্ঘছায়া। নারীমুক্তির কথা বলতে হলে এই বহুদূর প্রোথিত শিকড় উপড়ে ফেলার কথা ভাবতে হবে আমাদের।
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল
9 thoughts on “অহল্যার প্রতি”