
খুচরো কথা চারপাশে
পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা
সুনীল শর্মাচার্য
পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা
১
শুনছি, এত তাড়াতাড়ি করোনা যাবার নয়!
তাই কি আমরা স্বাভাবিক হয়ে পড়েছি? ভয়-ডর, নিয়ম-কানুনের ধার ধারছি না! মৃত্যু নিয়ে আর মাথাব্যথা নেই।
এখন করোনা বাড়ি, করোনা বাজার, করোনা মাঠঘাট, করোনা বিয়েবাড়ি, করোনা হাসপাতাল, করোনা বাস, করোনা ট্রেন, করোনা রাজনীতি, করোনা অফিস-কাচারি, করোনা ভ্রমণ, করোনা জগাখিচুড়ি, জিন্দাবাদ!
.
২
ভাবি নেগেটিভ। থাকি পজেটিভ!
ভাবি, কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ সর্বাধিক!
.
৩
ভালো লাগছে না! আজকের দিনটিও জীবন থেকে মরে গেল! তাপ-উত্তাপে জ্বলছি পুড়ছি।
চারদিকে ভীষণ অন্ধকার! আমাকে, তোমাকে, সবাইকে এক কঠিন দিকে টেনে নিচ্ছে। আলোর
দিশা দেখতে পারছি না! আতঙ্ক ছাড়া!!
.
৪
বুঝি না, ভারত তো একটাই দেশ। অনেকগুলো রাজ্য। তবু এক রাজ্যের মানুষ অন্যরাজ্যে কাজ
করতে গেলে কেন তাকে মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার বা পরিযায়ী শ্রমিক বলবো? ওরা কি অনুপ্রবেশকারী? কেন্দ্রের মনোভাব খুবই ঘৃণ্য। লজ্জার এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত!
আসলে, শ্রমিকরা গরীব। তাই কি তাদের কোনো দেশ নেই? গরীব বলে রাষ্ট্রের কাছে লজ্জা? কিন্তু
বিদেশে ভারতীয়দের বেলায় অন্য কেন? আমাদের বিরোধী নেতা-নেত্রীরাও কী তাই ভাবেন? তারাও ভাবুন, ক্ষমতায় আছেন যারা তাঁরাও পরিযায়ী! পাঁচ বছরের ঠিকে ঝি!!
.
৫
শাক দিয়ে মাছ আর ঢাকা যাচ্ছে না,
বুঝতে পারছেন দাদা-দিদিরা!
.
৬
বাতেলাবাজরা এখন দেশ চালাচ্ছে!
দিনেরাতে তাঁদের বাতেলা শুনতে শুনতে দেশ ক্লান্ত!
মানুষ বিরক্ত! তবু, বাতেলার শেষ নেই!!
.
৭
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
ফুটো করে, যে পাতে খাই!
.
৮
এখনো সভ্যতা একটুও সভ্য হয়নি! কি বিজ্ঞান, কি ধর্ম! কি মানবতা! কি শিক্ষা! সব বর্ণদ্বেষ, জাতি বিদ্বেষ, দাঙ্গা; কিছুই সভ্য পৃথিবী থেকে মুছে যায়নি! আর ক্ষমতার শীর্ষে যারা বসে আছেন—তারা সমাজের বিত্তশালীদের স্বার্থই দেখে। ধর্ম, রাজনীতি আজও সেই দাসপ্রথা লালন করে যাচ্ছে!
এই কি সভ্যতা? এই কি আধুনিক গণতন্ত্রের নমুনা? এই কি গালভরা মানবতা? সভ্যতায় এখনো আদিমতা দেখি! শিক্ষা? এখনো সত্যিকারের শি়ক্ষায় কেউ শিক্ষিত হয়নি! মানুষের জ্ঞানচর্চা এখনো মানুষের মনের ঘৃণা, অন্ধকার তাড়াতে পারেনি!
.
৯
ঘরবন্দী থেকে আমরা কি ধীরে ধীরে মর্ষকামের শিকার হচ্ছি!
হিংসা, ঘৃণা, রাগ, অসহ্যতা বাড়ছে!
.
১০
অপ্রাপ্তি, ব্যর্থতা, অক্ষমতা, দুশ্চিন্তা, অতৃপ্ত যৌনতা
আমাদের কামনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়…
.
১১
মুখে মুখে শুধুই বাত্
দেশবাসীর মাথায় হাত!
.
১২
পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কি দুটি সরকার?
নির্বাচিত সরকার আর সংবিধান নিযুক্ত রাজ্যপাল। কার ক্ষমতা বেশি বুঝতে পারি না!
.
১৩
সাত বছরে নিরন্তর ভারতকে নিয়ে মিত্রোঁ, তিনিই
বেশি ছিনিমিনি খেলছেন!
.
১৪
আমাদের ছোটবেলায় পাড়ার তিন পিসিকে দেখেছি। একজন ‘পচা’ বললে রেগে তাড়া করতেন; বাবা-মা তুলে খিস্তি করে তেড়ে আসতেন। হাতের কাছে যা পেতেন তা-ই ছুঁড়ে মারতেন।
আর একজনকে শুধু ‘তেষটি’ বললে তাড়া করতেন। অন্যজনকে ‘কচু’ বললে আর রক্ষে নেই! খিস্তির বন্যা বইয়ে দিতেন।
আমরা ছোটরা কি মজাই না পেতাম! এখন বড় বয়সে দেখছি চটিপিসিকে। তিনি ‘জয় শ্রীরাম’ শুনলেই তেড়ে যাচ্ছেন! হায়, ভগবান!
.
১৫
মিত্রোঁ, ঔদ্ধত্য একেই বলে! ধরাকে সরা জ্ঞান করা! গরীব মানুষকে দাস ভাবা। প্রতিবাদহীন ভাবা। শাসনযন্ত্রে বলিয়ান ভাবা। ঔদ্ধত্যে হিটলারকেও ছাড়িয়ে যেতে দুঃসাহস! মিথ্যাচারে বিশ্বরেকর্ড। নির্লজ্জ বেহায়া। আর কি চাই?
দেশজুড়ে হাহাকার। অসহায়, নিরন্ন মানুষ। বেঁচে থাকাটাই যখন কঠিন প্রশ্নের মুখে, তখন মিত্রোঁদের কোনো হেলদোল নেই! ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে মরিয়া! ভোটের খেলায় পাগলা হাতির আচরণ।
মিত্রোঁ, আবার গালভরা বাতেলা শুরু। মিথ্যের ললিপপ দেখাচ্ছে। সাবধান!
উচিত জবাব দেবার সময় আসছে। আমরা বোকা চো… নই, তা বুঝিয়ে দিতে, এখনই তৈরি হোন!
.
১৬
একঝাঁক দেশীয় পঙ্গপাল দেশের অর্থনীতি খেয়েছে।
আবার একঝাঁক বহিরাগত পঙ্গপাল দেশের শস্যদানা খেয়ে ফেলবে?
আমাদের দুর্গতির শেষ নেই!
.
১৭
সন্ধ্যা। শোঁ শোঁ হাওয়া। মন ভালো লাগছে না!
ঘর পোড়া গরু, মেঘ দেখে ভয়!
.
১৮
চিরদিন দেখছি—পুরোহিত, পাদ্রী, মোল্লা সবার থেকে দান গ্রহণ করেন।
কখনো কাউকে কিছু দান করেন না!
.
১৯
মানুষ যখন অতিমানুষ হয়ে যায়,
তখন তার নিজের কবর সে নিজেই খনন করে…
.
২০
মানুষ মরুক
গদি বাঁচুক
.
২১
এখন দেখি—
‘চোরের মায়ের বড় গলা’
.
২২
আমরা ভূত হয়ে গেছি। তাই আমাদের কোনো
ভবিষ্যত নেই!
.
২৩
ভাবি, স্বপ্নে যা যা দেখি, বাস্তবে তা কেন দেখি না?
.
২৪
ক্ষুধার কাছে হার মেনেছি
তোমার কাছে নয়…
.
২৫
যখন এগিয়ে যাই, তখন পেছন টেনে ধরে
যখন বর্তমান নিয়ে ভাবি, তখন অতীত টেনে ধরে!
.
২৬
কানাকে কানা, খোড়াকে খোড়া বলতে নেই।
তেমন চোরকেও চোর বলতে নেই!
তাতে অমানুষও দুঃখ পায়!
.
২৭
প্রয়োজন ছাড়া মানুষ একসাথে চলে না!
প্রয়োজন ফুরালে মানুষ আবার একা!
.
২৮
আমরা সত্যেই ভণ্ড ভাড়ামি করি। অরণ্যপ্রেমী, প্রকৃতি প্রেমী, পশুপ্রেমী, আরো আরো কতকিছুর প্রেমিক সাজার ভান করি!
সবই মিথ্যাচারে প্রচার সর্বস্ব। না-হলে কেন গাছ কাটি, অরণ্য ধ্বংস করি, পশু হত্যা করি, সভ্যতার নামে, শিল্পের নামে কত কি করি! বাস্তব পরিসংখ্যানে তার ছিঁটে ফোঁটাও করি না!
.
২৯
এখন সবাই লেখা দেখে, পড়ে না!
টিভি দেখে, কেউ শোনে না!
আবার যারা শোনে, তারা কিছু বোঝে না!!
.
৩০
আজ প্রকৃতি দিবস, কাল পিতা দিবস, মা দিবস, নারী দিবস, ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি, ইত্যাদি…
দিবসগুলো পালিত হয়, শপথগুলো নয়…!
.
৩১
খুনি, মাস্তান, ঘুষখোর, তোলাবাজ, দালাল, লম্পটরাই এখন সমাজে সম্মানিত!
তাই, শ্রেণী বৈষম্যের এতো বাড়বাড়ন্ত!
.
৩২
শুধু ক্ষমতা, গদির জন্য যত উদ্দোগ, আয়োজন। তার সিকি ভাগও নেই জনকল্যাণের উদ্দোগ!
এ কেমন রাজনীতি? এ কেমন পেশা? লজ্জা নেই, শুধু ভাওতাবাজি! মিথ্যার প্রতিশ্রুতি!!
.
৩৩
আজকালকার অতি শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা তার বাবা-মাকে দেখে না।
অথচ মৃত্যুর পর তার মরণোত্তর অনুষ্ঠান খুব ঘটা ক’রে করে!
.
৩৪
দেশে ভালো মানুষ আছে। তারা এতো বেশি ভালো যে, মন্দের ছোঁয়া বাঁচিয়ে আত্মরক্ষা
করতে গিয়ে তারা আরো বেশি হতোদ্যমে জড় পদার্থে পরিণত হচ্ছে!
.
৩৫
গরীব শুধু গরীবের মধ্যেই থাকে না। ধনীর মধ্যেও গরীব থাকে।
সে গরীব খাঁ খাঁ দারিদ্রে নিঃসঙ্গ!
.
৩৬
সম্পদশালীরা বিপুল অর্থ বিলাস পেয়েও ভাবে, তারা খুব কম পেয়েছে; তাদের কাছে কোনো সম্পদ-প্রাপ্তিই যেন যথেষ্ট নয়!
.
৩৭
সম্পদের সাম্য-বন্টন কোনোদিনই পৃথিবীতে সম্ভব নয়।
তাই শোষণ, অত্যাচার কোনোদিনই শেষ হবার নয়!
.
৩৮
শ্রম যারা দান করে, তারা চিরকাল শোষণের শিকার!
.
৩৯
ভারতে এই মুহূর্তে স্বচ্ছ কোনো মিডিয়া নেই। সবই যেন শাসকের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
আসল খবর তাই চাপা পড়ে যাচ্ছে! ধিক, জাতির বিবেককে…
.
৪০
যে শাসক শুধু ধনীদের স্বার্থ বড় করে দেখে,
তার পতনও অনিবার্য হয়ে ওঠে!
.
৪১
নিজের লেখা নিয়ে অন্ধত্ব একান্ত জরুরি—
কে কি বললো, কে কি ভাবলো ‘বয়ে গেছে’…
.
৪২
চোখের ভেতর লুকিয়ে আছে অদেখা এক চোখ!
পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা
৪৩
এখন সৎভাবে জীবনযাপনে মোটামুটি বাঁচা যায়। কিন্তু অসৎভাবে জীবনযাপনে বৈভব-বিলাসে সুখ নামক পাখিটি ছটফটাইয়া মরে!
পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা
৪৪
অসৎপথে অর্জিত সম্পদ এখন অহঙ্কার। এখন সম্মান!
পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা
৪৫
রাজনীতিতে অর্থের ছড়াছড়ি
তাই এত দুর্নীতি, দলাদলি!
.
৪৬
সব রাস্তাই শেষ হয় ঘরে ফিরে
সব রাস্তাই শুরু হয় ঘর থেকে…
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
6 thoughts on “পৌর্বাপর্য চিন্তা-ভাবনা”