সনেটগুচ্ছ
সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের সনেটগুচ্ছ
রাজনের প্রতি
ওড়াও মনের সুখে তুমি যে ফানুস
ওড়াও শান্তির নামে কবুতর পাখি,
কাকে বলো উন্নয়নসব দেখি ফাঁকি,
ভীত ও সন্ত্রস্ত ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ!
.
সভ্যতা, শুদ্ধতা, শান্তি, সব হয় ক্ষীণ
সন্ত্রাস দমনে ছোঁড়ো যত গোলাগুলি,
গো-বেচারা আমি দেখি মানুষের খুলি,
তুমি যাকে বলো ফুল, শুভ অচ্ছে দিন!
.
ভারত বোঝ না তুমি, চেনো না স্বভূমি
দম্ভ ও ক্ষমতা বলো সব হবে খালি,
মানুষ থাকলে দেশে থাকবে তো তুমি—
বিবিধের মাঝে দেখো দেয় হাততালি!
.
দেশজুড়ে বাড়ে শুধু কি যে হাহাকার
ধর্ষিতা রমণী আজ কাদের আহার
.
বাতাসে লাশের গন্ধ
বাতাসে লাশের গন্ধ, দেশজুড়ে লাশ
গনগনে রোদে পোড়ে ফসলের মাঠ,
কর্মহীন, খাদ্যহীন, মন হাঁসফাঁস—
আগুন দামে আহার, হাহাকার হাট!
.
এ তো অহল্যার দেশ, রাজা নামে রাম
সোনার ফসল চুরি, বিকোয় স্বভাব;
যুগ যুগ ভুলে যাই শিকড়ের নাম
দেবতা অসুরে চলে নানা ছলে ভাব!
.
জাতি-দাঙ্গা, হানাহানি, দেখে খুনি হাসে
রাজার আদেশে সব, কতকিছু ঘটে,
মৃত্যুর ইশারা দেখি সকালের ঘাসে—
কতকিছু বলে যায়, ঘটে, রটে, বটে!
.
প্রতিদিন খুন, গুম, দেশে তার ছবি
ছড়িয়ে লাশের গন্ধ রোজ ওঠে রবি!
.
গতিধারা
লড়াইহীন জীবন কবে ছিল বলো
আদি থেকে ছিল যুদ্ধ, গতিশীল ধারা,
প্রকৃতি দিয়েছে দিশা—পথ দেখে চলো
সর্বদা সচল সব, ওঠে ধ্রুবতারা!
.
প্রতিবাদ তাই আছে মিছিলে উজ্জ্বল
বাধা দিলে পথে বাধে কঠিন লড়াই,
নিয়ত জিয়নে ধারা তৃষ্ণা মেটা জল
জীবন জাগ্রত করে, সাহসে বড়াই!
.
নিরাশা কখনো আসে, দুঃখ-শোক আসে
তবুও অমোঘ কিছু সিদ্ধান্তে অটল,
সূর্য ওঠে, চাঁদ ওঠে, ফুল ফুটে হাসে
প্রবাহ সর্বদা চলে নদীটি উছল!
.
সত্যের নিরিখে মন দ্বিধা-দ্বন্দ্বহীন
অবিচল গতিধারা বলাকা উড্ডীন!
.
বাদুড়
নক্ষত্র-অক্ষরে লিখি রাতকানা নাম
বাদুড় রাক্ষসী কেউ রক্ত চুষে খান,
লোকজ ডাইনি ভাবি তুকতাক কাম
নিমেষে সাবাড় করে পশুদের জান!
.
আঁধারে সচল দেখি পাখি পাখি ভাব
পাখি নয় তবু সেও উড়ে উড়ে চলে,
বাঁশঝাড়, ঘন বনে গাছে গাছে ঝোলে
ফল চোষে, জল চোষে, চোষে ভেঙে ডাব!
.
খিদে পেলে রক্ত খায়, রক্তের শোষক
সমাজে নির্লিপ্ত আছে বাদুড় এমন—
খুঁজিনি, দেখিনি, জানি, গোপন চোষক
আমাদের রক্ত খায়, বুঝি না তেমন!
.
মধ্যরাতে ওড়ে বনে বাদুড় নিশ্চুপ
জোনাকিরা আলো জ্বালে বনে বনে চুপ!
.
কালের কলস ধরে
তমসা নদীর তীরে ক্রৌঞ্চরক্ত, ‘মা-নিষাদ’ শ্লোক
যার নাম প্রতিবাদ, উৎসে যার প্রসারিত গান—
কবি তাই লিখে যায় চিরায়ত মানুষের শোক
জীবনে জীবন ঘষে কল্পনায় উদ্দীপিত প্রাণ!
.
কালে কালে ভাঙে পট, গড়ে ওঠে পথ, গিরিখাদ
থাকুক প্রকৃতি, মাটি, নারীও থাকুক কবিতায়,
নইলে জীবন শূন্য, পদে পদে ঘটে পরমাদ…
মানুষকে ভুলে থাকা কখনো কি কবিকে মানায়
.
কবি, তবে চোখ মেলো, নয়নের রহস্য অপার
তুমি যদি কবি হও, প্রতারণা করো না নিজেকে,
আলোকে আলোই বলো, আঁধারকে বলো অন্ধকার—
তোমার সাধনা যেন সরে না যায় কবিতা থেকে!
.
কালের কলস ধরে অনন্ত কাল কবির লেখা—
অপরূপ জেগে থাকে জোছনায় নক্ষত্রের রেখা!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তপদ্য
ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য
ছড়া
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প : সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মতামত
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল
করোনা, ভারতীয় জনগণ ও তার সমস্যা
6 thoughts on “সুনীল শর্মাচার্যের সনেটগুচ্ছ”