ঘোড়া
সুনীল শর্মাচার্য
(সিবলি ও বাদশাকে)
ঘোড়া
১
স্থির দাঁড়িয়ে আছে; পায়ে
তার গতির রহস্য; চলনের
অজস্র ভঙ্গি ছড়িয়ে আছে—
.
রক্তে তার ঊর্ধ্বগতি; চোখ
স্নেহমাখা; দিগন্তকে ডাকে
.
টগবগিয়ে ধুলো উড়িয়ে
ছোটে লক্ষভেদ; বিশাল মাঠ
তাকে শব্দ করে ডাকে—
.
২
ঘাসের ওপর সে দাঁড়িয়ে
ঘুমন্ত স্মৃতির মতো শিথিল দেহ,
নিষ্ঠুর পিঠ খোলা মাঠ;
সূক্ষ্মপাতার সরল শব্দে চুপ;
শব্দের অর্থ সে বোঝে না;
শুধু শরীরে উদ্দীপনার রেশ
ছোটার আনন্দে ঘাস কাঁপায়
মাটি কাঁপায়, ব্রহ্মের মতো
চোখে স্বপ্ন মাখা, দুর্বোধ্য আবেগ
.
ঘাস অথবা সে জানে না—
অনুতপ্ত যারা মাটি ছুঁয়ে বাঁচে!
.
৩
প্রস্তর যুগ থেকে তাকে
মাঠে ছুটতে দেখি;
বোধের মাটিতে তার নাল পোঁতা,
গতির পিঠ চুলকে দিচ্ছে সহিস…
.
খানাখন্দ এক লাফে পেছনে ফেলে
দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চাকার মতন,
.
সে ছুটছে, সামনে জবাকুসুম সূর্য…
.
৪
তার খেলা বিস্ময়কর, প্রাচীন
কাল থেকেই পৌরুষের প্রতীক;
অসি ঝনঝন রণভূমিজুড়ে তার ঝিলিক
.
তৃষ্ণা ভয়ানক কামবীজে
ঘোরে ফেরে তার চিক্…
.
চন্দ্রবিজয়ে সেও ইন্দ্রজালিক!
.
৫
তোমার দৌড় থামাও, দীর্ঘসময়
দৌড়ে দৌড়ে হাঁপিয়ে গেছ; এখন
ঘরে যাও, ঋতু এসেছে; ডাকছে পাখি
শাখায় শাখায় নতুন পাতার মঞ্জরি
বাতাস কী সাংঘাতিক; মনোরম
খুলে গেছে পথঘাট, ঘরের দুয়ার
সযত্নে দাঁড়িয়ে কেউ; উত্তেজিত
অপেক্ষা; তুমি যাও তার কাছে
.
পাখি ডাকে, পাতা নড়ে, এলো প্রজনন কাল
.
৬
তোমার পৌরুষের খেলা দেখে
চমকিত বাতাস; গাছপালা,
পাখিরাও উত্তেজনায় অস্থির;
সারা দেহে উত্থান,
রক্তে ঢেউ মাখা সংগীত—
সৃষ্টি করে চুপে চুপে গতির ঝংকার!
.
৭
কতভাবে দৌড়ে গেছ—কত না সময়
টপকে গেছ বাঁধা, ধ্বস্ত সময়…
এইভাবে বেঁচে আছে তোমার অনুভূতি
.
সেই আদ্যিকাল থেকে, মাঠে-কান্তারে
ছোটার শেষ নেই; অসম্ভব টগবগ গতি—
লোকালয়ে, রেসের মাঠে কিংবা রণক্ষেত্রে
.
এখনো তোমার দাম একটু বেশি!
.
৮
ঘাস খাবে ভেবে মাঠে যায়—
ঘাস কোথায়? খরা মাঠে ওড়ে চিল
আকাশ কাঁপা দিগন্ত কেমন নীল
.
ঠোঁট কাঁপে, পা কাঁপে, ক্ষুধা চেপে গায় :
এবার আল্লা মেঘ দে, পানি দে, ঘাস দে
আমরা বেঁচে থাকি একটু আহ্লাদে
.
৯
অনেক ক্লান্তির পর, অনেক ঘুমের পর,
মনে হলো—এখনো তুমি পায়ের শিকল
সম্পূর্ণভাবে খুলে নিতে পারোনি…
.
সেই তোমার, যার এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে
মহাকালের পথ খুলে দেবার কথা ছিল…
.
কিছুই তো নেই তোমার। জ্বলন্ত হ্যারিকেন খুলে দেখ—
তেল নেই। রক্ত ভরা আছে।
.
মরা ধানক্ষেতের অনেক নিচে একটু খুঁজলেই
পেয়ে যাবে তোমার মা’কে,
.
যার সারা গায়ে একটার পর একটা সাপ এসে
ক্রমাগত ছোবল দিয়ে নদীর কথা লিখে গেছে—
ঘোড়া
১০
ঘাস খেতে খেতে লাফ দেয়
এগিয়ে যায় সে কিছুটা
বনের মাঝে রাত্রি তখন
লতায় পাতায় রহস্যে ঢাকা
জোনাকপোকা চুমকি জ্বালে
আঁধার ঘিরে ঝিলিক কাটা
চমকে দেখে ঘাস কাঁপছে
রাত্রি-গন্ধে মাতোয়ারা
বৃক্ষজটা কাঁপে হাওয়ায়
শিশির দেয় গায়ে কাঁটা
.
সে তখন অন্য সাড়ায়
ধরতে গিয়ে চাঁদের বাহার
কুকিপাখির রূপ ধরে তাই
শিকার করে গাঢ়-আঁধার
.
তার মনে যে উঁকি মারে
রক্তগন্ধার কোমল আকার
পরমানন্দে অচিন ছোঁয়ায়
সে করে ঘাসের আহার
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তপদ্য
ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প: সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মতামত
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল
করোনা, ভারতীয় জনগণ ও তার সমস্যা
10 thoughts on “ঘোড়া”