মহাভারতের পুঁথি
সুনীল শর্মাচার্য
মহাভারতের পুঁথি
১
বুজরুকি সব
বুজরুকি সব,
রাম নামে রাম
চলে উৎসব!
.
কথা শুনে কথা
করে মাথা ব্যথা,
আশা ক্ষয়ে ভাষা
করে কার জপ?
.
আলো নেই আলো
কালো শুধু কালো,
দিশেহারা হয়ে
পথ বেঁকে যায়;
.
দিন রাত আসে
কেউ কাঁদে হাসে,
ঘরে ঘরে শোক
প্রাণ কুরে খায়!
.
বুজরুকি সব
বুজরুকি সব,
দেশজুড়ে যত
ধিক্ কলরব!
.
২
দূর্গ ভাঙে দূর্গ গড়ে
তবু দূর্গ যায় না,
কত শত চেষ্টা চলে
দূর্গ ভাঙা যায় না!
.
৩
বদলে যাচ্ছে একলা বিকেল
বদলে যাচ্ছে হাওয়া,
কেঁপে উঠছে বুকের গহীন
চাওয়া শূন্য চাওয়া!
.
বিকেল জানে দিনের মরণ
আঁধার গিলে খাওয়া,
নীরব যারা তারাও সরব
ছিনিয়ে কিছু পাওয়া!
.
উড়ছে কার একলা আঁচল
করছে দূরে ধাওয়া,
বদলে যাচ্ছে একলা মানুষ
হতাশ নৌকা বাওয়া!
.
৪
নোটবন্দীর গুণগানে
নাচলো যেসব মাল,
তারা এখন কোথায় গেল
কোথায় খাটায় পাল?
.
ঋণ খেলাপি শিল্পপতি
কোথায় হলো ধাওয়া?
দেশের রাজা রঘুপতির
ভরসা ক্ষয়ে হাওয়া!
.
দেশি মানুষ হয় বিদেশি
করবে এনপিআর,
ভয় দেখিয়ে জয় করবে
দেশ ক’রে ছারখার!
.
কোটি মানুষ বেকার হবে
হারিয়ে তাদের কাজ,
ভাষণ দিয়ে যায় না গড়া
দেশের মাথায় তাজ!
.
জান হ্যায় তো জাহান হ্যায়
জান থাকে কই ধড়ে,
জাহান হলো নরক মাখা
বাদ-প্রতিবাদ মরে!
.
৫
পা হাঁটছে পথে
লক্ষ হাজার পা,
পথ পেরিয়ে ঐ
বাড়ির দিকে পা!
.
পথে হাঁটছে পা
ট্রেনে কাঁটছে পা,
ট্রাকে পিষছে পা,
তবুও হাঁটছে পা
থামতে জানে না!
.
পা হাঁটছে পথে
বাড়ির দিকে পা,
দেশটা কাঁদছে
মানুষ কাঁদছে,
তাকিয়ে থাকে মা!
.
পা হাঁটছে পথে
মৃত্যু তফাৎ যা,
ধান্দাবাজি আর
সহ্য হচ্ছে না!
.
৬
Car BMW মেড জার্মানি
আই ফোনও আমেরিকার,
জুতো বলো, বিমানও বলো
তাও দেখছি আমেরিকার!
.
পরেন সার্ট মেড ইতালি
পরেন ঘড়ি মেড ইতালি,
সানগ্লাসটা তাও ইতালি
বিদেশি ভাব তার মিতালি!
.
বুক পকেটে ঝুলিয়ে পেন
করেন জার্মানি আমদানি,
আত্মনির্ভর স্বদেশি হও—
শুনে সকলের চুলকানি!
.
খনার বচন শুনে মিঁত্রো,
জ্বলছে গলা, আবার পিত্ত!
.
৭
আমরা দিচ্ছি ট্যাক্স ও জিএসটি
আমাদের টাকায় কিনছো গুলি,
আমাদের টাকায় পোষো পুলিশ
আমাদের ওড়াও মাথার খুলি!
.
আমাদের টাকায় কেনো বিমান
আমাদের রক্তে আরাম-আয়েশ,
পিষেই মারছো শ্রমিক কিষাণ
মেটে না তবুও তোমার খায়েশ!
.
এসব দুঃখ কোথায় তুলে রাখি?
বুকের রক্তে গণতন্ত্রটা ঢাকি!
.
৮
যা খেয়ে প্রাণ বাঁচে তোদের
করবো না তার চাষ,
তোরা এবার হাওয়া খাবি
মিটুক তোদের আশ!
.
ভাত কাড়বি, জোত কাড়বি
কাড়বি কি আর ভাষা?
আমরা আছি তাই তো আছে
তোদের সুখের হাসা!
.
৯
যাদের খেয়ে বাঁচছো তুমি
তাদের মারছো লাথি,
ভোটের জোরে ভাবছো তুমি
হয়েছো বিরাট হাতি!
.
কাদায় পড়লে কাবু হাতি
মশাও মারে লাথি,
গায়ের জোর ফুরিয়ে গেলে
পালায় সঙ্গী সাথী!
.
নিজের কবর নিজে খোঁড়ো
চোখে চশমা আঁটি,
সবকিছুতে ব্যবসা ভাবো
ভাঙবে তোমার ঘাঁটি!
.
১০
মন কি বাত শুনতে শুনতে আমরা তো কাৎ
সারাদেশে উঠল রব : কেয়াবাত, কেয়াবাত!
প্রশ্ন ওঠে জনে জনে
চুপ থাকি মনে মনে
আত্মনির্ভর স্বপ্ন নিয়েই দিনকে করি রাত!
.
১১
কি যে খেলা খেলছ তুমি
দেশটা নিয়ে,
বুঝতে পারি, মুখ খুলি না
লজ্জা নিয়ে!
…………………
পড়ুন
কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের একগুচ্ছ কবিতা
সুনীল শর্মাচার্যের ক্ষুধাগুচ্ছ
লকডাউনগুচ্ছ : সুনীল শর্মাচার্য
সুনীল শর্মাচার্যের গ্রাম্য স্মৃতি
নিহিত মর্মকথা : সুনীল শর্মাচার্য
প্রয়াণগাথা : সুনীল শর্মাচার্য
মুক্তপদ্য
ইচিং বিচিং পদ্য : সুনীল শর্মাচার্য
ছড়া
সুনীল শর্মাচার্যের ভারতীয় হালচাল
গল্প
এক সমাজবিরোধী ও টেলিফোনের গল্প : সুনীল শর্মাচার্য
আঁধার বদলায় : সুনীল শর্মাচার্য
প্রবন্ধ
কবির ভাষা, কবিতার ভাষা : সুনীল শর্মাচার্য
মতামত
মুক্তগদ্য
খুচরো কথা চারপাশে : সুনীল শর্মাচার্য
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ পাঠ্যান্তে
ভারতের কৃষিবিল যেন আলাদিনের চেরাগ-এ-জিন
বাঙালিদের বাংলা চর্চা : খণ্ড ভারতে
ভারতে চীনা দ্রব্য বয়কট : বিষয়টা হাল্কা ভাবলেও, সমস্যাটা কঠিন এবং আমরা
রাজনীতি বোঝো, অর্থনীতি বোঝো! বনাম ভারতের যুবসমাজ
ভারতে শুধু অমর্ত্য সেন নয়, বাঙালি সংস্কৃতি আক্রান্ত
ভারতের CAA NRC নিয়ে দু’চার কথা
ভারতের এবারের বাজেট আসলে অশ্বডিম্ব, না ঘরকা না ঘাটকা, শুধু কর্পোরেট কা
ইন্ডিয়া ইউনাইটেড বনাম সেলিব্রিটিদের শানে-নজুল
করোনা, ভারতীয় জনগণ ও তার সমস্যা
1 thought on “মহাভারতের পুঁথি”